বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:বাংলার যে সব এলাকায় বিজেপি বিজয়ী জয়ী হবে, সেইসব এলাকায় কোনও রকম উন্নয়ন করা হবে না। ঠিক এই ভাষাতেই তৃণমূলের কর্মিসভা থেকে রীতিমতো হুমকি দিলেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। একই সঙ্গে তৃণমূল কর্মী–সমর্থকদেরও কড়া ভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন, তাঁরা যেন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করে দেন। না হলে কঠোর পদক্ষেপ করবেন। এদিকে, অনুব্রতর কথায় রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যদিও কোনও বিতর্ককে কোনও ভাবেই গুরুত্ব দিতে রাজি নন তিনি।
অনুব্রত মণ্ডল মানেই যেন বিতর্ক। আগেও তাঁর কথায় রাজনৈতিক মহলে বহুবার শোরগোল পড়েছে। সেই ধারাই বজায় রইল বীরভূমের খয়রাশোলে। সেখানে তৃণমূলের কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন জেলার দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল। সেখানে উপস্থিত থেকে তিনি মনে করিয়ে দিলেন, এলাকায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে তৃণমূলকে জেতাতেই হবে। তাঁর কথায় পরিষ্কার হয়ে যায়, আগের লোকসভা নির্বাচনে খয়রাশোলে বিজেপি যে অনেকটাই এগিয়েছিল তৃণমূলের চেয়ে, তা নিয়েই তিনি এ–সব কথা বলছেন। খয়রাশোলে দুই দলের ভোটের ব্যবধান ছিল ১০ হাজারেরও বেশি। শুধু তাই নয়, তিনি লোকসভা নির্বাচনে ভোট মার্জিনের হিসেবও করেন। তেমনই একটি বুথের ভোটের হার নিয়ে হিসেব করে দেখেন, সেই বুথে তৃণমূল যেখানে পেয়েছে মাত্র ১০০টি ভোট, সেখানে বিজেপি পেয়েছে ৭০০টি ভোট।
আর সেই হিসেব দিতে গিয়েই উত্তপ্ত হয়ে ওঠেন অনুব্রত। সেই বুথের সভাপতিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘আপনি আমাকে দেবেন না, অথচ আমি আপনাকে দিয়ে যাব, এ কথা কখনও ভাববেন না। তাই আপনি আমাকে না দিলে আমিও আপনাকে দেব না।’ এর পরই তিনি নাকরোকোদার অঞ্চল সভাপতিকে পরিষ্কার বলে দেন, ‘যেখানে বিজেপি জয়ী হবে, সেখানে সব কাজ বন্ধ। কোনও উন্নয়ন হবে না। কোনও অঞ্চলে তৃণমূলকে জেতাতে না পারলে সেখানে উন্নয়নের কাজও হবে না।’ এদিন খয়রাশোলের হজরতপুর, লোকপুর এবং নাকরাকোদায় তৃণমূলের বুথ কর্মীদের কাছে দলের হারের কারণ জানতে চান তিনি। দলের মধ্যে থেকে গোষ্ঠীবাজি করলে বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জড়ালে সেইসব কর্মীকে দল থেকে বের করে দেওয়ারও হুমকি দেন তিনি।
মুহূর্তেই অনুব্রত মণ্ডলের এই হুমকির কথা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে। শুধু তাই নয়, অনুব্রত মণ্ডল এমন কথা বলতে পারেন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তবে সরাসরি অনুব্রত মণ্ডলের এই হুমকির জবাব দিয়েছে জেলা বিজেপি। তাদের বীরভূম জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলও কড়া ভাষায় বলেন, ‘সরকারি উন্নয়নের টাকা অনুব্রত মণ্ডলের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। তিনি রাজনৈতিক ভাবে এমন কথা বলতে পারেন না। তিনি অসাংবিধানিক কথা বলছেন। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার উন্নয়নের জন্য যে টাকা পাঠায়, তা মানুষের কর থেকে পাওয়া টাকা। কোনও রাজনৈতিক দলের নয়।’ পাশাপাশি এদিনই মল্লারপুরে বিজেপি কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে মল্লারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় বিজেপি নেতারা।